সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম ২০২৪: সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মুনাফা প্রাপ্যতার হার

কর্তৃক সরকারি আদেশ
0 মন্তব্য 455 views

বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন নিয়ম প্রবর্তিত হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ এবং সীমাবদ্ধতা উভয়ই এনেছে। চলুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই নতুন নিয়মাবলী এবং কীভাবে সেগুলো আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে।

সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে নতুন নিয়মাবলী

করমুক্ত মুনাফা:
২০২৪ সালের নতুন কর আইনের অধীনে, পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে কোনো কর দিতে হবে না। এটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা, কারণ তারা মুনাফার পুরো টাকাই হাতে পাবেন।

টিআইএন সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয়তা:
পাঁচ লক্ষ টাকার ওপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিনিয়োগের পরিমাণের উপর নির্ভর করে মুনাফার হার ধাপে ধাপে কমে যাবে, যা বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিবেচনা করা উচিত।

মাসিক মুনাফা প্রদানের সুবিধা:
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে বিনিয়োগকারীরা প্রতি মাসেই মুনাফা পাবেন। এটি তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা, কারণ নিয়মিত মুনাফা তাদের মাসিক আয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করবে এবং বাজেট পরিকল্পনায় সহায়ক হবে।

বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন শর্তাবলী

যারা ১৫ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ করবেন, তাদের জন্য মুনাফার হার ধাপে ধাপে কমানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:

  • ১৫ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে:** মুনাফার হার হবে ১০.৫০%।
  • ৩০ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে:** মুনাফার হার কমে ৮.৫০% হবে।

এই বিধানগুলো বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ উৎসে অর্থ বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার (৩ বছর মেয়াদী)

নতুন নিয়ম অনুযায়ী পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নিচের মতো নির্ধারণ করা হয়েছে:

  • ১ম বছর: ১০.৯২%
  • ২য় বছর: ১১.২৮%
  • ৩য় বছর: ১১.৫২%
  • গড় হার: ১১.২৪%

বিনিয়োগের পরিমাণের ভিত্তিতে এই হারগুলো ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে, তারা ১০.৫০% মুনাফা পাবেন, তবে ৩০ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার কমে ৮.৫০% হয়ে যাবে।

৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

১৯৭৭ সালে প্রবর্তিত ৫-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং লাভজনক বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। এটি বিভিন্ন মূল্যমানের সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সঞ্চয়কারীদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে। চলুন, এই সঞ্চয়পত্রের মূল বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধাগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

মূল্যমানের বিভিন্নতা

বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মূল্যমানগুলো হলো:

  • ১০ টাকা
  • ৫০ টাকা
  • ১০০ টাকা
  • ৫০০ টাকা
  • ১,০০০ টাকা
  • ৫,০০০ টাকা
  • ১০,০০০ টাকা
  • ২৫,০০০ টাকা
  • ৫০,০০০ টাকা
  • ১,০০,০০০ টাকা
  • ৫,০০,০০০ টাকা
  • ১০,০০,০০০ টাকা
  • ২৫,০০,০০০ টাকা

ক্রয় ও নগদায়ন

এই সঞ্চয়পত্র জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাসমূহ, তফসিলি ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে ক্রয় ও নগদায়ন করা যায়।

মেয়াদ

৫-বছর মেয়াদী এই সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্ণ হতে পাঁচ বছর সময় লাগে। মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়নের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মুনাফা হার প্রযোজ্য হবে।

মুনাফার হার

পাঁচ বছরের জন্য মুনাফার হার ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পায়। নীচে বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী মুনাফার হার তুলে ধরা হলো:

বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী মুনাফার হার

সূত্রঃ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর

নগদায়ন

মেয়াদপূর্তির পূর্বে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের ক্ষেত্রে উপরোক্ত মুনাফার হার প্রযোজ্য হবে। যদি অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধিত হয়ে থাকে, তা মূল টাকা থেকে কর্তন করে অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধ করা হবে।

উৎসে কর

৫-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্রে সর্বমোট ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার উপর ৫% এবং এর অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১০% হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।

সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিনিয়োগ নিয়মাবলী

সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পূর্বে ক্রয়কৃত সঞ্চয় স্কিমের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা সেই সময়ের নির্ধারিত মুনাফার হার অনুযায়ী মুনাফা পাবেন। তবে, পুনঃবিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম এবং মুনাফার হার প্রযোজ্য হবে।

ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নিয়ম:

১ লক্ষ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে এখন থেকে পুরো অর্থ নগদে পরিশোধ করা যাবে না। অবশিষ্ট অর্থ ব্যাংকে জমা দিয়ে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

বিনিয়োগ কৌশল: আপনার পোর্টফোলিওকে সঠিকভাবে সাজান

নতুন নিয়মাবলী অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সময় আপনাকে বিনিয়োগের আকার এবং মুনাফার হার বিবেচনা করতে হবে। বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি অন্যান্য বিনিয়োগ মাধ্যম, যেমন জমি, সোনা, এবং শেয়ার বাজারেও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা উচিত।

আপনার পোর্টফোলিও সাজানোর সময়, একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিনিয়োগ কৌশল অবলম্বন করা উচিত। সঞ্চয়পত্রে একটি অংশ বিনিয়োগ করে, অন্য অংশগুলো উচ্চ রিটার্নের উৎসগুলোতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, যাতে ঝুঁকি কমানো যায় এবং আয়ের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা যায়।

উপসংহার

২০২৪ সালের সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের নতুন নিয়মাবলী বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে এসেছে। মাসিক মুনাফা প্রাপ্তির সুবিধা ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে, তবে বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার কমানোর বিধানটি একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সঠিক বিনিয়োগ কৌশল ও পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে, আপনি এই নতুন নিয়মাবলী থেকে সর্বাধিক সুবিধা নিতে পারবেন এবং আপনার বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

নিচে সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কিত ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) প্রদান করা হলো:

১. ২০২৪ সালে সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়মাবলী কী কী পরিবর্তন এনেছে?

উত্তর: ২০২৪ সালের নতুন নিয়মাবলীর মধ্যে অন্যতম প্রধান পরিবর্তন হলো পাঁচ লক্ষ টাকার নিচে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে করমুক্ত মুনাফা, টিআইএন সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয়তা, এবং প্রতিমাসে মুনাফা প্রদানের সুবিধা।

২.  বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার কেমন হবে?

উত্তর: যারা ১৫ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ করবেন, তাদের জন্য মুনাফার হার ধাপে ধাপে কমে যাবে। ১৫ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১০.৫০%, এবং ৩০ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার ৮.৫০% হবে।

৩.  পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কীভাবে নির্ধারিত হয়েছে?

উত্তর: পরিবার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে ১ম বছরে মুনাফার হার ১০.৯২%, ২য় বছরে ১১.২৮%, এবং ৩য় বছরে ১১.৫২% নির্ধারিত হয়েছে। গড় মুনাফার হার হবে ১১.২৪%।

৪.  সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কীভাবে প্রাপ্ত হবে?

উত্তর: নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা প্রতি মাসেই মুনাফা গ্রহণ করতে পারবেন, যা তাদের মাসিক আয়ের একটি স্থিতিশীল উৎস হিসেবে কাজ করবে।

৫.  সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য কী কী প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে?

উত্তর: সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সার্টিফিকেট, এবং বিনিয়োগের পরিমাণের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যাংক চেক জমা দিতে হবে।

৬. সঞ্চয়পত্র কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তর: জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাসমূহ, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে ক্রয় ও নগদায়ন করতে পারবেন।

রিলেটেড আরও পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.