রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জীবনে এখন নিত্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার ঈদযাত্রায় ১৫৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১২৩ জন, যা মোট নিহতের ৩৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৪৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৩ জন, অর্থাৎ ১৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এই সময়ে ৯টি নৌ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ১২৩ জন (৩৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ), বাসযাত্রী ৩৩ জন (১০ দশমিক ৬১), ট্রাক-পিকআপ-লরি আরোহী ১৬ জন (৫ দশমিক ১৪ শতাংশ) বাস-প্রাইভেট কার যাত্রী ১৮ জন (৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ), থ্রি–হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৫৭ জন (১৮ দশিক ৩২ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নছিমন-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্রা-পাওয়ারটিলার) ১০ জন (৩ দশমিক ২১) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ৮ জন (২ দশমিক ৫৭ শতাংশ) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১০৯টি জাতীয় মহাসড়কে, ৭৭টি আঞ্চলিক সড়কে, ৬১টি গ্রামীণ সড়কে এবং ২৭টি শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাগুলোর ৭৬টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৯৯টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৫১টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৪২টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৬টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর এবং নিহত পথচারীদের ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছে।
২০২১ সালের ঈদুল আজহা উদ্যাপনকালে ৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৫ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসাবে এ বছর ঈদুল আজহায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৮৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৪ দশমিক ৭৪, সকালে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ, দুপুরে ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, বিকেলে ২০ দশমিক ৮০ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯ দশমিক ৮৫ দশমিক এবং রাতে ২২ দশমিক ২৬।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ আর প্রাণহানি ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ও প্রাণহানি ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে খুলনা বিভাগে। আর এ বিভাগে প্রাণহানি ১১ দশমিক ৫৭ ভাগ।
বরিশালে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ৪৭ ভাগ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৪৬ ভাগ। সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ৭৪ ভাগ এবং প্রাণহানি ৬ দশমিক ৭৫। রংপুরে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৯৩ ভাগ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৩২। ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ১০ এবং প্রাণহানি ৫ দশমিক ৭৮ ভাগ।
ঈদযাত্রা ও দুর্ঘটনা পর্যালোচনা
এবারের ঈদুল আজহা উদ্যাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২৬ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনা ফিরতি যাত্রায় বেশি হয়েছে। গত বছরের ঈদুল আজহার চেয়ে এ বছরের ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৬১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনা রোধে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।