সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কি? পুনর্বহাল সংক্রান্ত আদেশ

কর্তৃক সরকারি আদেশ
0 মন্তব্য 378 views

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের দাবি একটি দীর্ঘদিনের। এই সুবিধাগুলো কর্মচারীদের কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা জোগায় এবং তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আসুন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নিই।

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কি?

টাইম স্কেল (Time Scale) কী?

টাইম স্কেল হলো একটি ব্যবস্থা, যেখানে একজন কর্মচারী নির্দিষ্ট সময় পর পদোন্নতি ছাড়াই বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পান। অর্থাৎ, একজন কর্মচারী যদি দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত থাকেন এবং কোনো পদোন্নতি না পান, তবে নির্দিষ্ট সময় শেষে তার বেতন স্কেলে একটি ধাপ অগ্রগতি ঘটে। এটি কর্মচারীর অভিজ্ঞতা এবং চাকরিতে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গণ্য করা হয়।

উদাহরণ:
ধরুন, একজন সরকারি কর্মচারী ৮০০০-১৬৫৪০ টাকার স্কেলে একটি পদে চাকরি করছেন। যদি তিনি টানা ৮ বছর এই পদে কাজ করেন এবং কোনো পদোন্নতি না পান, তবে তার বেতন টাইম স্কেল অনুযায়ী বেড়ে ১০০০০-২০৯০০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। এটি তার চাকরির দীর্ঘমেয়াদি সেবা এবং দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করা হয়।

সিলেকশন গ্রেড (Selection Grade) কী?

সিলেকশন গ্রেড হলো কর্মচারীর কাজের মান, দক্ষতা, এবং দীর্ঘমেয়াদি সেবার ভিত্তিতে প্রদান করা একটি বিশেষ বেতন বৃদ্ধি। এটি সাধারণত সেই কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হয়, যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পদোন্নতি পাননি। সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে একজন কর্মচারী তার বর্তমান পদে থেকেও একটি উন্নত বেতন স্কেলে উন্নীত হন। এটি কর্মচারীর কর্মক্ষমতা এবং তার কাজে নিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

উদাহরণ:
যদি একজন কর্মচারী ১২ বছর ধরে কর্মরত থাকেন এবং তার কোনো পদোন্নতি না হয়, তবে তাকে সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা হতে পারে। এর ফলে তার বেতন স্কেল পূর্বের ১০০০০-২০৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০০০-২৭০০০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। এটি তার কাজের মান এবং দীর্ঘমেয়াদি সেবার পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়।

সংক্ষেপে:

টাইম স্কেল: নির্দিষ্ট সময় পর পদোন্নতি ছাড়াই বেতন বৃদ্ধির সুবিধা।

সিলেকশন গ্রেড: কাজের মান, দক্ষতা, এবং দীর্ঘমেয়াদি সেবার ভিত্তিতে বেতন স্কেলে উন্নতি।

এই দুইটি ব্যবস্থা কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং তাদের কাজের প্রতি উদ্দীপনা বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।

আরো পড়ুনঃ সরকারি চাকুরীতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিত নীতিমালা-২০০৯

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কি ভাবছে?

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি প্রেরিত একটি পত্রে, নবম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণার সঙ্গে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল, সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিপটপ ভাতা প্রদান, ১০০% পেনশন পুনর্বহাল এবং পেনশন গ্র্যাচুইটির হার ১:৫০০ টাকা নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবিসমূহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই দাবি গুলো নিষ্পত্তির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পূনর্বহাল সংক্রান্ত আদেশ

এটি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি সুখবর, কারণ এটি তাদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং কর্মজীবনের উন্নতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

 

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালএর কথা বলা হচ্ছে, আসুন দেখি পে-স্কেল-২০০৯ এ কি ছিল। 

টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড নির্ধারণ কত বছর পর পর পরিবর্তনের বিধান হয়?

সরকারি চাকরিতে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড নির্ধারণের জন্য সাধারণত নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। তবে এই সময়সীমা চাকরির প্রকারভেদ এবং সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।

২০০৯ এর জাতীয় পে স্কেল অনুযায়ী, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের পরিবর্তন এবং প্রাপ্তির সময়সীমা নিম্নরূপ:

 টাইম স্কেল প্রাপ্তির সময়সীমা:

১. নন-গেজেটেড সরকারি কর্মচারীরা (যাদের বেতন স্কেল ৪১০০-৭৭৪০ টাকা থেকে ৮০০০-১৬৫৪০ টাকা পর্যন্ত):

    • ৮, ১২, এবং ১৫ বছরের চাকরি পূর্ণ হওয়ার পর এবং চাকরির সন্তোষজনক রেকর্ডের ভিত্তিতে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, এবং তৃতীয় উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) প্রাপ্ত হবেন।
    • একই কর্মচারী তার সমগ্র চাকরি জীবনে তিনটির অধিক টাইম স্কেল প্রাপ্ত হবেন না।

২. দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তারা:

    • ৮ এবং ১২ বছরের চাকরি পূর্ণ হওয়ার পর টাইম স্কেল প্রাপ্ত হবেন।
    • এই সুবিধা ১ জুলাই, ২০০৯ থেকে কার্যকর হবে। তবে, ১ জুলাই, ২০০৯-এর পূর্বে অর্জিত চাকরির মেয়াদ শুধুমাত্র বেতন নির্ধারণের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং কোনো বকেয়া আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবে না।

৩. প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা:

  • বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছার ১ বছরের পর টাইম স্কেল প্রাপ্ত হবেন।
  • সমগ্র চাকরি জীবনে ১টির অধিক টাইম স্কেল প্রাপ্ত হবেন না।

সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তির সময়সীমা:

১. যেসব পদে ১০ এবং ১৫ বছরের চাকরি পূর্ণ হয়েছে:

  • কর্মচারী সন্তোষজনক চাকরির রেকর্ডের ভিত্তিতে ১ম এবং ২য় উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হবেন।

২. ৮ম গ্রেডভুক্ত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা:

  • ৪ বছরের চাকরি পূর্ণ হওয়ার পর এবং সন্তোষজনক চাকরির রেকর্ডের ভিত্তিতে সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত হবেন।
  • ১ জুলাই, ২০০৯ থেকে ১০০% সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তির সুবিধা প্রযোজ্য হবে।

৩. বিসিএস ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা:

  • ৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত পদে ১০ বছরের চাকরি পূর্ণ হলে ৫ম গ্রেডের সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত হবেন।

পে-স্কেল-২০০৯ এর নীতিমালা

২০১৫ গেজেটে সিলেকশন গ্রেড ও উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) এর বিলোপ্ত

চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ ২০১৫ গেজেট প্রকাশের তারিখ অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ থেকে সিলেকশন গ্রেড স্কেল এবং উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) প্রদান সংক্রান্ত সকল বিধানাবলি বিলুপ্ত হয়েছে। এর অর্থ হলো, এই তারিখের পর আর কোনো কর্মচারী সিলেকশন গ্রেড স্কেল বা টাইম স্কেল প্রাপ্ত হবেন না, এমনকি স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছানোর ১ বছর পর পরবর্তী উচ্চতর স্কেল পাওয়ার বিধানও রহিত করা হয়েছে।

উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতা

১. প্রথম ১০ বছর পর উচ্চতর গ্রেড:

  • কোনো স্থায়ী কর্মচারী যদি একই পদে ১০ বছর ধরে কাজ করেন এবং তার চাকরির রেকর্ড সন্তোষজনক হয়, তবে ১১তম বছরে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন।

২. প্রথম উচ্চতর গ্রেডের ৬ বছর পর:

  • প্রথম উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির পর, যদি কর্মচারী আরও ৬ বছর ধরে পদোন্নতি না পান, তবে ৭ম বছরে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও একটি উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন, তবে এটি চাকরির সন্তোষজনক রেকর্ডের উপর নির্ভর করবে।

৩. উচ্চতর গ্রেডের সীমাবদ্ধতা:

  • এই আর্থিক সুবিধা শুধুমাত্র ৪র্থ গ্রেড পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, ৪র্থ গ্রেড বা তার উপরের গ্রেডের কর্মচারীরা এই সুবিধা গ্রহণ করে ৩য় গ্রেড বা তার উপরের গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন না।

৪. পূর্বের টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত কর্মচারী:

  • যেসব কর্মচারী আগে দুই বা ততোধিক সিলেকশন গ্রেড স্কেল, উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল), বা স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছানোর ১ বছর পর পরবর্তী উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হয়েছেন, তারা এই নতুন আদেশ অনুযায়ী আর উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন না।

এই নীতিমালা অনুযায়ী, কর্মচারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেডের সুবিধা পাবেন, তবে সিলেকশন গ্রেড এবং টাইম স্কেলের মতো পূর্বের সুবিধাগুলি বিলুপ্ত হয়েছে।

2015 পে-স্কেলের নীতিমালা

2015 পে-স্কেলের নীতিমালা

 

উপসংহার

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি, যা তাদের কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়াতে এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে এই সুবিধাগুলো পুনর্বহালের মাধ্যমে কর্মচারীরা তাদের কাজের প্রতি আরও নিবেদিত হতে পারবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি আশার আলো। আমরা আশা করি, শীঘ্রই এই দাবিগুলো বাস্তবায়িত হবে এবং কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন, যা তাদের কর্মজীবনকে আরও সাফল্যমণ্ডিত করবে।

রিলেটেড আরও পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.