পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে কি মোটর সাইকেল চালানো যায়? প্রাপ্তির প্রক্রিয়া-২০২৪

কর্তৃক সরকারি আদেশ
0 মন্তব্য 218 views

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে মোটর সাইকেল চালানোর বিষয়ে জানতে হলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে যে, পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিভিন্ন শ্রেণী ও তাদের ব্যবহারের উদ্দেশ্য কী।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের শ্রেণী

বাংলাদেশে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাধারণত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত:

  1. হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স: এই লাইসেন্সের অধীনে ২৫০০ কেজির নিচে ওজনের মোটরযান চালানো যায়।
  2. মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্স: এই লাইসেন্সের মাধ্যমে ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি ওজনের মোটরযান চালানো যায়।
  3. ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স: ৬৫০০ কেজির বেশি ওজনের যানবাহন চালানোর জন্য এই লাইসেন্স প্রয়োজন।

মোটর সাইকেল চালানোর জন্য লাইসেন্স

মোটর সাইকেল চালানোর জন্য সাধারণত একটি হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন। যদি পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সে হালকা মোটরযান চালানোর অনুমতি থাকে, তাহলে মোটর সাইকেল চালানো যাবে। তবে এটি নিশ্চিত করা জরুরি যে, লাইসেন্সের মধ্যে “মোটর সাইকেল” চালানোর অনুমোদন উল্লেখ আছে কিনা।

লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এই ধাপগুলো নিম্নরূপ:

আবেদন প্রক্রিয়া

  1. আবেদন ফরম পূরণ: নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে।
  2. মেডিকেল সার্টিফিকেট: আবেদনকারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রমাণ হিসেবে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের কাছ থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিতে হবে।
  3. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদ অথবা পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে।
  4. ফি প্রদান: পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ফি ১৪৩৮ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
  5. বয়সের শর্ত:
      • পেশাদার হালকা লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।
      • পেশাদার মধ্যম লাইসেন্সের জন্য বয়স হতে হবে ২৩ বছর এবং হালকা লাইসেন্সে ৩ বছর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
      • ভারী লাইসেন্সের জন্য বয়স হতে হবে ২৬ বছর এবং মধ্যম লাইসেন্সে ৩ বছর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া

বর্তমানে বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন অনলাইনে করা যায়। নিচে অনলাইনে আবেদন করার ধাপগুলো তুলে ধরা হলো:

  1. বিআরটিএ (BRTA) ওয়েবসাইটে নিবন্ধন: বিআরটিএ সেবা বাতায়ন এ গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ ও মোবাইল নম্বর প্রদান করে নিবন্ধন করতে হবে।
  2. আবেদন ফরম পূরণ: নিবন্ধনের পর নির্ধারিত ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।
  3. অনলাইনে পেমেন্ট: নির্ধারিত ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে এবং বিআরটিএর নির্ধারিত ব্যাংকে পেমেন্টের রশিদ জমা দিতে হবে।
  4. ডকুমেন্ট আপলোড: জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং পাসপোর্ট সাইজ ছবি আপলোড করতে হবে।
  5. লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া: সমস্ত তথ্য ও কাগজপত্র আপলোডের পর আবেদনটি পর্যালোচনা করা হবে এবং সফল হলে লার্নার লাইসেন্স প্রদান করা হবে।

পরীক্ষার প্রক্রিয়া

  • আবেদন জমা দেওয়ার পর লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্টের মাধ্যমে আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই করা হবে।
  • পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় আবেদনকারীর লার্নার লাইসেন্স এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে।

লাইসেন্স ইস্যু

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, লাইসেন্স ইস্যু করা হবে এবং এটি স্মার্টকার্ড আকারে প্রদান করা হবে।

পরীক্ষার ধরন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষায় কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়:

  • সড়ক সাইন সম্পর্কে জ্ঞান: পরীক্ষায় সড়ক সাইন এবং তাদের অর্থ সম্পর্কে আবেদনকারীর জ্ঞান যাচাই করা হয়।
  • ড্রাইভিং স্কিল চেক: ড্রাইভিং দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য ফিল্ড টেস্ট নেওয়া হয়, যেখানে বাস্তব পরিস্থিতিতে গাড়ি চালানোর ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়।

নিরাপত্তার দিক

পেশাদার ড্রাইভার হিসেবে ট্রাফিক আইন মেনে চলা ও নিরাপত্তার নির্দেশনা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু লাইসেন্স পাওয়ার জন্যই নয়, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও অপরিহার্য। নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতার মাধ্যমে নিরাপদ ড্রাইভিং নিশ্চিত করা সম্ভব।

উপসংহার

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে মোটর সাইকেল চালানো সম্ভব, তবে লাইসেন্সের শ্রেণী এবং শর্তাবলী অনুযায়ী তা বৈধ কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। লাইসেন্সের প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করার পর আপনি আইনগতভাবে মোটর সাইকেল চালানোর অনুমতি পাবেন।

রিলেটেড আরও পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.