গ্রিন টি: গবেষকদের মতে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি

কর্তৃক সরকারি আদেশ
0 মন্তব্য 214 views

গ্রিন টি: আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সেরা উপকারিতা। হৃদরোগ প্রতিরোধ, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি, ওজন কমানো এবং আরও অনেক কিছু—জানুন কিভাবে এই জনপ্রিয় পানীয় আপনার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে। 

পৃথিবীর সর্বাধিক জনপ্রিয় পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চা। কিন্তু সব ধরনের চায়ের মধ্যে গ্রিন টি এর বিশেষ স্থান রয়েছে, এবং এর উপকারিতা শুনলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। আজ আমরা সেই উপকারিতাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো, যা হয়তো আপনার জানা ছিল না। চলুন জেনে নেই কিভাবে এই সাধারণ এক কাপ গ্রিন টি আপনার জীবন বদলে দিতে পারে।

দুটি কাচের জারে গ্রিন টি, একটি গাঢ় বাদামী এবং অন্যটি হালকা রঙের, একটি বোনা ম্যাটের উপর রাখা।

কাচের জারে গ্রিন টি । ছবিঃ www.pexels.com

কেন গ্রিন টি এত বিশেষ?

গ্রিন টি এর বিশেষত্বের মূল কারণ এর মধ্যে থাকা ক্যাটেচিনস নামের একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ক্যাটেচিনস কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং শরীরের বার্ধক্যজনিত প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গ্রিন টি তে পাওয়া যায় EGCG (এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট), যা কোষকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে থাকেন, তাহলে প্রতিদিনের রুটিনে গ্রিন টি যোগ করা একটি বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

 

স্থুলতা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গ্রিন টি

অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গ্রিন টি সম্পর্কে বাড়িয়ে বলা তথ্য দিয়ে থাকে। তারা গ্রিন টি কে স্থূলতা কমানোর ঔষধ হিসেবে প্রচার করেন, কিন্তু এটি আসলে সত্য নয়। গবেষণা দেখায় যে, গ্রিন টি আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণের প্রধান মাধ্যম নয়

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি কার্বোহাইড্রেটের শোষণ কমাতে পারে, যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। তবে এর জন্য আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন।

গ্রিন টি এর আরেকটি সুবিধা হলো এটি খানিকটা পরিপূর্ণতার অনুভূতি দেয়, যা খাবার গ্রহণ কমাতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু, আশা করা উচিত নয় যে গ্রিন টি একাই আপনাকে ১০ পাউন্ড ওজন কমিয়ে দেবে। ধীরে ধীরে ওজন কমানোর জন্য এটি একটি সহায়ক উপাদান হতে পারে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।

আরো পড়ুন :ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট থাকলে নরমাল?

হৃদরোগ প্রতিরোধে গ্রিন টি

গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি রক্তচাপ কমাতে সহায়ক, বিশেষ করে পোস্টমেনোপজাল নারীদের ক্ষেত্রে। এছাড়াও, এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে উন্নত করতে পারে। আপনি যদি আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে চান, তাহলে প্রতিদিন ২-৪ কাপ গ্রিন টি পান করা একটি সহজ উপায় হতে পারে।

 

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

শরীরের পাশাপাশি গ্রিন টি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যেও সহায়ক। এটি অ্যালঝাইমার্স এবং পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কমায়। গ্রিন টি তে থাকা ক্যাফেইন আমাদের মনকে সজাগ রাখে এবং দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। গ্রিন টি তে পাওয়া যায় এল-থিয়ানিন, যা মনকে শান্ত রাখে এবং মনোযোগ ও ফোকাস বাড়াতে সহায়ক।

 

ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সম্ভাবনা

অনেক সময় শোনা যায় যে গ্রিন টি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। যদিও এই দাবিগুলোকে শতভাগ প্রমাণিত বলা যায় না, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গ্রিন টি এর মধ্যে থাকা EGCG ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার যেমন ব্রেস্ট, ওভারিয়ান, প্রোস্টেট ও গলার ক্যান্সার প্রতিরোধে এর উপকারীতা থাকতে পারে। তবে এ ধরনের দাবিগুলোর জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।

 

কতটুকু গ্রিন টি পান করবেন?

প্রতিদিন ২-৪ কাপ গ্রিন টি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়। তবে বেশি গ্রিন টি পান করলে এর উপকারিতা আর বাড়বে না। ক্যাফেইন সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য এটি কম পরিমাণে পান করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

মনে রাখবেন, এটি একটি ধীরে কাজ করা প্রক্রিয়া—আপনার শরীরে এর প্রভাব বুঝতে সময় লাগবে। তাই নিয়মিত গ্রিন টি পান করুন এবং দীর্ঘমেয়াদি উপকারিতা উপভোগ করুন।

একটি কাঁচের মগে গ্রিন টি টেবিলের উপর রাখা, পটভূমিতে দুটি ব্যক্তি রয়েছে।

কাঁচের মগে গ্রিন টি । ছবিঃ www.pexels.com

শেষ কথা

গ্রিন টি হয়তো কোনো জাদুর পানীয় নয়, কিন্তু এটি নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যা আপনাকে ধীরে ধীরে আরও সুস্থ করে তুলবে। হৃদরোগ থেকে মস্তিষ্কের সুস্থতা পর্যন্ত, গ্রিন টি এর প্রভাব অসাধারণ। তাই প্রতিদিনের ব্যস্ততায় এক কাপ গ্রিন টি নিয়ে নিজেকে সতেজ রাখুন, আর দেখুন কিভাবে এটি ধীরে ধীরে আপনার জীবনকে আরও সুস্থ এবং সুন্দর করে তুলছে।

 

গ্রিন টি সম্পর্কিত ৫টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ FAQ:

১. গ্রিন টি কতটা উপকারী?

উত্তর: গ্রিন টি নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যেমন ক্যাটেচিনস সমৃদ্ধ, যা কোষের ক্ষতি রোধ করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে, ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে এবং কিছু গবেষণায় ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক হতে দেখা গেছে।

২. গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় কখন?

উত্তর: গ্রিন টি সাধারণত দিনে যে কোনো সময় পান করা যেতে পারে। তবে, সকালের সময় অথবা খাবারের সাথে পান করলে এটি সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে। যদি আপনি ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীল হন, তবে সন্ধ্যার পর গ্রিন টি পান করা এড়িয়ে চলুন, যাতে এটি আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে।

৩. কত কাপ গ্রিন টি পান করা উচিত?

উত্তর: স্বাস্থ্যকর সুবিধা পেতে প্রতিদিন ২ থেকে ৪ কাপ গ্রিন টি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি পান করলে এর উপকারিতা আরও বৃদ্ধি পাবে না, বরং এটি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যেমন পেটের সমস্যা বা অম্লরস।

৪. গ্রিন টি এর মধ্যে কেমন ক্যাফেইন থাকে?

উত্তর: গ্রিন টি তে সাধারণত ক্যাফেইনের পরিমাণ কম থাকে, যা এক কাপ চাতে প্রায় ২০-৪৫ মিলিগ্রাম। এটি কফির তুলনায় কম ক্যাফেইন সরবরাহ করে, তাই যারা ক্যাফেইন সংবেদনশীল, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

৫. গ্রিন টি কি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে?

উত্তর: কিছু গবেষণা গ্রিন টি এর মধ্যে থাকা EGCG ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে সহায়ক হতে পারে বলে ধারণা করে। তবে, ক্যান্সার প্রতিরোধে গ্রিন টি একমাত্র উপায় নয় এবং এটি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রয়োজন।

রিলেটেড আরও পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.