বাংলাদেশের মানুষের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল সোমবার তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ সংক্রান্ত গ্যাজেট প্রকাশিত হয়। তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত বিধান করিবার লক্ষ্যে ৫ই এপ্রিল, ২০০৯ (২২শে চৈত্র, ১৪১৫) তারিখে এই আইন প্রণীত হয়। খেয়ালী ডট কম এর পাঠকদের জন্য ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন হুবহু তুলে ধরা হলো।
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
ঢাকা, ৬ই এপ্রিল, ২০০৯ / ২৩শে চৈত্র, ১৪১৫
সংসদ কর্তৃক গৃহীত নিম্নলিখিত আইনটি ৫ই এপ্রিল, ২০০৯ (২২শে চৈত্র, ১৪১৫) তারিখে রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করিয়াছে এবং এতদ্বারা এই আইনটি সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা যাইতেছে –
২০০৯ সনের ২০ নং আইন (তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯)
তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত বিধান করিবার লক্ষ্যে প্রণীত আইন।
যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত এবং তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ;
এবং যেহেতু জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক ও জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক; এবং
যেহেতু জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হইলে সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারী ও বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাইবে, দুর্নীতি হ্রাস পাইবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হইবে;
এবং যেহেতু সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারী ও বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়ােজনীয়;
সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইলঃ—
প্রথম অধ্যায় ( তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯)
(প্রারম্ভিক)
১। সংক্ষিপ্ত শিরােনাম ও প্রবর্তন।—
(১) এই আইন তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ নামে অভিহিত হইবে।
(২) এই আইনের –
- (ক) ধারা ৮, ২৪ এবং ২৫ ব্যতিত অন্যান্য ধারা ২০ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে; এবং
- (খ) ৮, ২৪ এবং ২৫ ধারা ১লা জুলাই, ২০০৯ তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।
২। সংজ্ঞাঃ বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী না হইলে, এই আইনে –
(ক) “আপীল কর্তৃপক্ষ” অর্থ –
- (অ) কোন তথ্য প্রদান ইউনিটের ক্ষেত্রে উক্ত ইউনিটের অব্যবহিত ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান; অথবা
- (আ) কোন তথ্য প্রদান ইউনিটের উতন কার্যালয় না থাকিলে, উক্ত তথ্য প্রদান ইউনিটের প্রশাসনিক প্রধান;
(খ) “কর্তৃপক্ষ” অর্থ –
- (অ) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সৃষ্ট কোন সংস্থা;
- (আ) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত কার্য বিধিমালার অধীন গঠিত সরকারের কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা কার্যালয়;
- (ই) কোন আইন দ্বারা বা উহার অধীন গঠিত কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;
- (ঈ) সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত বা সরকারী তহবিল হইতে সাহায্যপুষ্ট কোন বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;
- (উ) বিদেশী সাহায্যপুষ্ট কোন বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;
- (উ) সরকারের পক্ষে অথবা সরকার বা সরকারী কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পাদিত চুক্তি মােতাবেক সরকারী কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান; বা
- (ঋ) সরকার কর্তৃক, সময় সময়, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;
(গ) “কর্মকর্তা” অর্থে কর্মচারীও অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(ঘ) “তথ্য প্রদান ইউনিট” অর্থ –
- (অ) সরকারের কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা কার্যালয়ের সহিত সংযুক্ত বা অধীনস্থ কোন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা দপ্তরের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা কার্যালয় বা উপজেলা কার্যালয়;
- (আ) কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা কার্যালয় বা উপজেলা কার্যালয়;
(ঙ) “তথ্য কমিশন” অর্থ ধারা ১১ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত তথ্য কমিশন;
(চ) “তথ্য” অর্থে কোন কর্তৃপক্ষের গঠন, কাঠামাে ও দাপ্তরিক কর্মকান্ড সংক্রান্ত যে কোন স্মারক, বই, নকশা, মানচিত্র, চুক্তি, তথ্য-উপাত্ত, লগ বহি, আদেশ, বিজ্ঞপ্তি, দলিল, নমুনা, পত্র, প্রতিবেদন, হিসাব বিবরণী, প্রকল্প প্রস্তাব, আলােকচিত্র, অডিও, ভিডিও, অংকিতচিত্র, ফিল্ম, ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত যে কোন ইনস্ট্রমেন্ট, যান্ত্রিকভাবে পাঠযােগ্য দলিলাদি এবং
ভৌতিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে অন্য যে কোন তথ্যবহ বস্তু বা উহাদের প্রতিলিপিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, দাপ্তরিক নােট সিট বা নােট সিটের প্রতিলিপি ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না;
(ছ) “তথ্য অধিকার” অর্থ কোন কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার;
(জ) “তফসিল” অর্থ এই আইনের তফসিল;
(ঝ) “তৃতীয় পক্ষ” অর্থ তথ্য প্রাপ্তির জন্য অনুরােধকারী বা তথ্য প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অনুরােধকৃত তথ্যের সহিত জড়িত অন্য কোন পক্ষ;
(ঞ) “দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা” অর্থ ধারা ১০ এর অধীন নিযুক্ত কর্মকর্তা;
(ট) “নির্ধারিত” অর্থ বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত;
(ঠ) “প্রবিধান” অর্থ ধারা ৩৪ এর অধীন প্রণীত কোন প্রবিধান;
(ড) “বাছাই কমিটি” অর্থ ধারা ১৪ এর অধীন গঠিত বাছাই কমিটি;
(ঢ) “বিধি” অর্থ ধারা ৩৩ এর অধীন প্রণীত কোন বিধি।
৩। আইনের প্রাধান্য প্রচলিত অন্য কোন আইনের-
(ক) তথ্য প্রদান সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলী দ্বারা ক্ষুন্ন হইবে না; এবং
(খ) তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।
দ্বিতীয় অধ্যায় (তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯)
৪। তথ্য অধিকারঃ এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরােধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।
৫। তথ্য সংরক্ষণঃ
(১) এই আইনের অধীন তথ্য অধিকার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার যাবতীয় তথ্যের ক্যাটালগ এবং ইনডেক্স প্রস্তুত করিয়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করিবে।
(২) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ যেই সকল তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণের উপযুক্ত বলিয়া মনে করিবে সেই সকল তথ্য, যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে, কম্পিউটারে সংরক্ষণ করিবে এবং তথ্য লাভের সুবিধার্থে সমগ্র দেশে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উহার সংযোগ স্থাপন করিবে।
(৩) তথ্য কমিশন, প্রবিধান দ্বারা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদান করিবে এবং সকল কর্তৃপক্ষ উহা অনুসরণ করিবে।
৬। তথ্য প্রকাশ—
(১) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার গৃহীত সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম কিংবা সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কর্মকান্ডের সকল তথ্য নাগরিকগণের নিকট সহজলভ্য হয়, এইরূপে সূচিবদ্ধ করিয়া প্রকাশ ও প্রচার করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কো কর্তৃপক্ষ কোন তথ্য গােপন করিতে বা উহার সহজলভ্যতাকে সঙ্কুচিত করিতে পারিবে না।
(৩) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করিবে যাহাতে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যথাঃ—
- (ক) কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামাের বিবরণ, কার্যক্রম, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের দায়িত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিবরণ বা পদ্ধতি;
- (খ) কর্তৃপক্ষের সকল নিয়ম-কানুন, আইন, অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, প্রজ্ঞাপন, নির্দেশনা, ম্যানুয়্যাল, ইত্যাদির তালিকাসহ উহার নিকট রক্ষিত তথ্যসমূহের শ্রেণীবিন্যাস;
- (গ) কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে কোন ব্যক্তি যে সকল শর্তে লাইসেন্স, পারমিট, অনুদান, বরাদ্দ, সম্মতি, অনুমােদন বা অন্য কোন প্রকার সুবিধা গ্রহণ করিতে পারিবেন উহার বিবরণ এবং উক্তরূপ শর্তের কারণে তাহার সহিত কোন প্রকার লেনদেন বা চুক্তি সম্পাদনের প্রয়ােজন হইলে সেই সকল শর্তের বিবরণ;
- (ঘ) নাগরিকদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করিবার জন্য প্রদত্ত সুবিধাদির বিবরণ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম, পদবী, ঠিকানা এবং, প্রযােজ্য ক্ষেত্রে, ফ্যাক্স নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা।
(৪) কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ কোন নীতি প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে ঐ সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রকাশ করিবে এবং, প্রয়ােজনে, ঐ সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমর্থনে যুক্তি ও কারণ ব্যাখ্যা করিবে।
(৫) এই ধারার অধীন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত প্রতিবেদন বিনামুল্যে সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য সহজলভ্য করিতে হইবে এবং উহার কপি নামমাত্র মূল্যে বিক্রয়ের জন্য মজুদ রাখিতে হইবে।
(৬) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত সকল প্রকাশনা জনগণের নিকট উপযুক্ত মূল্যে সহজলভ্য করিতে হইবে।
(৭) কর্তৃপক্ষ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অথবা অন্য কোন পন্থায় প্রচার বা প্রকাশ করিবে।
(৮) তথ্য কমিশন, প্রবিধান দ্বারা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য প্রকাশ, প্রচার ও প্রাপ্তির জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদান করিবে এবং সকল কর্তৃপক্ষ উহা অনুসরণ করিবে।
৭। কতিপয় তথ্য প্রকাশ বা প্রদান বাধ্যতামূলক নয়। এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলীতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন কর্তৃপক্ষ কোন নাগরিককে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে না, যথাঃ—
(ক) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হইতে পারে এইরূপ তথ্য;
(খ) পররাষ্ট্রনীতির কোন বিষয় যাহার দ্বারা বিদেশী রাষ্ট্রের অথবা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা বা আঞ্চলিক কোন জোট বা সংগঠনের সহিত বিদ্যমান সম্পর্ক ক্ষুন্ন হইতে পারে এইরূপ তথ্য;
(গ) কোন বিদেশী সরকারের নিকট হইতে প্রাপ্ত কোন গােপনীয় তথ্য;
(ঘ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন তৃতীয় পক্ষের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে এইরূপ বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক অন্তর্নিহিত গােপনীয়তা বিষয়ক, কপিরাইট বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (Intellectual Property Right) সম্পর্কিত তথ্য;
(ঙ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্থাকে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত করিতে পারে এইরূপ নিমােক্ত তথ্য, যথাঃ
- (অ) আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট ও আবগারী আইন, বাজেট বা করহার পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন আগাম তথ্য;
- (আ) মুদ্রার বিনিময় ও সুদের হার পরিবর্তনজনিত কোন আগাম তথ্য;
- (ই) ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা ও তদারকি সংক্রান্ত কোন আগাম তথ্য;
(চ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হইতে পারে বা অপরাধ বৃদ্ধি পাইতে পারে এইরূপ তথ্য;
(ছ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইতে পারে বা বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচার কার্য ব্যাহত হইতে পারে এইরূপ তথ্য;
(জ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের গােপনীয়তা ক্ষুন্ন হইতে পারে এইরূপ তথ্য;
(ঝ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন ব্যক্তির জীবন বা শারীরিক নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হইতে পারে এইরূপ তথ্য;
(ঞ) আইন প্রয়ােগকারী সংস্থার সহায়তার জন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক গােপনে প্রদত্ত কোন তথ্য;
(ট) আদালতে বিচারাধীন কোন বিষয় এবং যাহা প্রকাশে আদালত বা ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে অথবা যাহার প্রকাশ আদালত অবমাননার শামিল এইরূপ তথ্য;
(ঠ) তদন্তাধীন কোন বিষয় যাহার প্রকাশ তদন্ত কাজে বিঘ্ন ঘটাইতে পারে এইরূপ তথ্য;
(ড) কোন অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেফতার ও শাস্তিকে প্রভাবিত করিতে পারে এইরূপ তথ্য;
(ঢ) আইন অনুসারে কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে এইরূপ তথ্য;
(ণ) কৌশলগত ও বাণিজ্যিক কারণে গােপন রাখা বাঞ্ছনীয় এইরূপ কারিগরী বা বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ কোন তথ্য;
(ত) কোন ক্রয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ হইবার পূর্বে বা উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ক্রয় বা উহার কার্যক্রম সংক্রান্ত কোন তথ্য;
(থ) জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিকার হানির কারণ হইতে পারে এইরূপ তথ্য;
(দ) কোন ব্যক্তির আইন দ্বারা সংরক্ষিত গােপনীয় তথ্য;
(ধ) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বা পরীক্ষায় প্রদত্ত নম্বর সম্পর্কিত আগাম তথ্য;
(ন) মন্ত্রিপরিষদ বা, ক্ষেত্রমত, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপনীয় সার-সংক্ষেপসহ আনুষঙ্গিক দলিলাদি এবং উক্তরূপ বৈঠকের আলােচনা ও সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোন তথ্য ও তবে শর্ত থাকে যে, মন্ত্রিপরিষদ বা, ক্ষেত্রমত, উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবার পর অনুরূপ সিদ্ধান্তের কারণ এবং যেসকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করিয়া সিদ্ধান্তটি গৃহীত হইয়াছে উহা প্রকাশ করা যাইবে।
আরাে শর্ত থাকে যে, এই ধারার অধীন তথ্য প্রদান স্থগিত রাখিবার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য কমিশনের পূর্বানুমােদন গ্রহণ করিতে হইবে।
৮। তথ্য প্রাপ্তির অনুরােধ-
(১) কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন তথ্য প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট তথ্য চাহিয়া লিখিতভাবে বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম বা ই-মেইলে অনুরােধ করিতে পারিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অনুরােধে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের উল্লেখ থাকিতে হইবে, যথাঃ
(অ) অনুরােধকারীর নাম, ঠিকানা, প্রযােজ্য ক্ষেত্রে, ফ্যাক্স নম্বর এবং ই-মেইল ঠিকানা;
(আ) যে তথ্যের জন্য অনুরােধ করা হইয়াছে উহার নির্ভুল এবং স্পষ্ট বর্ণনা;
(ই) অনুরােধকৃত তথ্যের অবস্থান নির্ণয়ের সুবিধার্থে অন্যান্য প্রয়ােজনীয় প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলী; এবং
(ঈ) কোন্ পদ্ধতিতে তথ্য পাইতে আগ্রহী উহার বর্ণনা অর্থাৎ পরিদর্শন করা, অনুলিপি নেওয়া, নােট নেওয়া বা অন্য কোন অনুমােদিত পদ্ধতি।
(৩) এই ধারার অধীন তথ্য প্রাপ্তির অনুরােধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মুদ্রিত ফরমে বা, ক্ষেত্রমত, নির্ধারিত ফরমেটে হইতে হইবে।
তবে শর্ত থাকে যে, ফরম মুদ্রিত বা সহজলভ্য না হইলে কিংবা ফরমেট নির্ধারিত না হইলে, উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত তথ্যাবলী সন্নিবেশ করিয়া সাদা কাগজে বা, ক্ষেত্রমত, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বা ই-মেইলেও তথ্য প্রাপ্তির জন্য অনুরােধ করা যাইবে।
(৪) উপ-ধারা (১) এর অধীন তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনুরােধকারীকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক উক্ত তথ্যের জন্য নির্ধারিত যুক্তিসংগত মূল্য পরিশােধ করিতে হইবে।
(৫) সরকার, তথ্য কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে এবং সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, তথ্য প্রাপ্তির অনুরােধ ফিস এবং, প্রয়ােজনে, তথ্যের মূল্য নির্ধারণ করিয়া দিতে পারিবে এবং, ক্ষেত্রমত, কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি-শ্রেণীকে কিংবা যে কোন শ্রেণীর তথ্যকে উক্ত মূল্য প্রদান হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে।
(৬) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ, তথ্য কমিশনের নির্দেশনা অনুসরণে, বিনামূল্যে যে সকল তথ্য সরবরাহ করা হইবে উহার একটি তালিকা প্রস্তুত করিয়া প্রকাশ ও প্রচার করিবে।
৯। তথ্য প্রদান পদ্ধতি —
(১) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ধারা ৮ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন অনুরােধ প্রাপ্তির তারিখ হইতে অনধিক ২০ (বিশ) কার্য দিবসের মধ্যে অনুরােধকৃত তথ্য সরবরাহ করিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অনুরােধকৃত তথ্যের সহিত একাধিক তথ্য প্রদান ইউনিট বা কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা থাকিলে অনধিক ৩০ (ত্রিশ) কার্য দিবসের মধ্যে উক্ত অনুরােধকৃত তথ্য সরবরাহ করিতে হইবে।
(৩) উপ-ধারা (১) ও (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন কারণে তথ্য প্রদানে অপারগ হইলে অপারগতার কারণ উল্লেখ করিয়া আবেদন প্রাপ্তির ১০ (দশ) কার্য দিবসের মধ্যে তিনি উহা অনুরােধকারীকে অবহিত করিবেন।
(৪) উপ-ধারা (১) এবং (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ধারা ৮ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন অনুরােধকৃত তথ্য কোন ব্যক্তির জীবন-মৃত্যু, গ্রেফতার এবং কারাগার হইতে মুক্তি সম্পর্কিত হইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনুরােধ প্রাপ্তির অনধিক ২৪ (চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে উক্ত বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করিবেন।
(৫) উপ-ধারা (১), (২) বা (৪) এ উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য সরবরাহ করিতে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যর্থ হইলে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রাপ্তির অনুরােধ প্রত্যাখ্যান করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।
(৬) কোন অনুরােধকৃত তথ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট সরবরাহের জন্য মজুদ থাকিলে তিনি উক্ত তথ্যের যুক্তিসংগত মূল্য নির্ধারণ করিবেন এবং উক্ত মূল্য অনধিক ৫ (পাঁচ) কার্য দিবসের মধ্যে পরিশােধ করিবার জন্য অনুরােধকারীকে অবহিত করিবেন।
(৭) উপ-ধারা (৬) এর অধীন মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানের প্রকৃত ব্যয় যেমন—তথ্যের মুদ্রিত মূল্য ইলেক্ট্রনিক ফরমেট এর মূল্য কিংবা ফটোকপি বা প্রিন্ট আউট সংক্রান্ত যে ব্যয় হইবে উহা হইতে অধিক মূল্য নির্ধারণ করা যাইবে না।
(৮) ধারা ৮ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন অনুরােধকৃত তথ্য প্রদান করা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট যথাযথ বিবেচিত হইলে এবং যেক্ষেত্রে উক্ত তথ্য তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক সরবরাহ করা হইয়াছে কিংবা উক্ত তথ্যে তৃতীয় পক্ষের স্বার্থ জড়িত রহিয়াছে এবং
তৃতীয় পক্ষ উহা গােপনীয় তথ্য হিসাবে গণ্য করিয়াছে সেইক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্তরূপ অনুরােধ প্রাপ্তির ৫ (পাঁচ) কার্য দিবসের মধ্যে তৃতীয় পক্ষকে উহার লিখিত বা মৌখিক মতামত চাহিয়া নােটিশ প্রদান করিবেন
এবং তৃতীয় পক্ষ এইরূপ নােটিশের প্রেক্ষিতে কোন মতামত প্রদান করিলে উহা বিবেচনায় লইয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনুরােধকারীকে তথ্য প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন।
(৯) ধারা ৭ এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, তথ্য প্রকাশের জন্য বাধ্যতামূলক নয়, এইরূপ তথ্যের সহিত সম্পর্কযুক্ত হইবার কারণে কোন অনুরােধ সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করা যাইবে না এবং
অনুরােধের যতটুকু অংশ প্রকাশের জন্য বাধ্যতামূলক নয় এবং যতটুকু অংশ যৌক্তিকভাবে পৃথক করা সম্ভব, ততটুকু অংশ অনুরােধকারীকে সরবরাহ করিতে হইবে।
(১০) কোন ইন্দ্রীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কোন রেকর্ড বা উহার অংশবিশেষ জানাইবার প্রয়ােজন হইলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে তথ্য লাভে সহায়তা প্রদান করিবেন এবং পরিদর্শনের জন্য যে ধরণের সহযােগিতা প্রয়ােজন তাহা প্রদান করাও এই সহায়তার অন্তর্ভুক্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
তৃতীয় অধ্যায়: (তথ্য অধিকার আইন ২০০৯)
(১) এই আইন কার্যকর হইবার অব্যবহিত পূর্বে বিদ্যমান প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ, এই আইন জারীর ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত উক্ত কর্তৃপক্ষের প্রত্যেক তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়ােগ করিবে।
(২) এই আইন কার্যকর হইবার পর প্রতিষ্ঠিত কোন কর্তৃপক্ষ, উক্তরূপ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হইবার ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত উক্ত কর্তৃপক্ষের প্রত্যেক তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়ােগ করিবে।
(৩) এই আইন কার্যকর হইবার পর কোন কর্তৃপক্ষ উহার কোন কার্যালয় সৃষ্টি করিলে, উক্তরূপ কার্যালয় সৃষ্টির তারিখ হইতে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত উক্ত কার্যালয় তথা নবসৃষ্ট তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়ােগ করিবে।
(৪) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (১), (২) ও (৩) এর অধীন নিয়ােগকৃত প্রত্যেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম, পদবী, ঠিকানা এবং, প্রযােজ্য ক্ষেত্রে, ফ্যাক্স নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা উক্তরূপ নিয়ােগ প্রদানের ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করিবে।
(৫) এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালনের প্রয়ােজনে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অন্য যে কোন কর্মকর্তার সহায়তা চাহিতে পারিবেন এবং কোন কর্মকর্তার নিকট হইতে এইরূপ সহায়তা চাওয়া হইলে তিনি উক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়ােজনীয় সহায়তা প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবেন।
(৬) কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক উপ-ধারা (৫) এর অধীন অন্য কোন কর্মকর্তার সহায়তা চাওয়া হইলে এবং এইরূপ সহায়তা প্রদানে ব্যর্থতার জন্য আইনের কোন বিধান লংঘিত হইলে সেইক্ষেত্রে এই আইনের অধীন দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে উক্ত অন্য কর্মকর্তাও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলিয়া গণ্য হইবেন।
চতুর্থ অধ্যায়ঃ তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা, ইত্যাদি (তথ্য অধিকার আইন ২০০৯)
১১। তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা।—
(১) এই আইন কার্যকর হইবার পর, অনধিক ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এবং উহার বিধান অনুসারে তথ্য কমিশন নামে একটি কমিশন প্রতিষ্ঠিত হইবে।
(২) তথ্য কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন সংস্থা হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সীলমােহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, উহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার এবং হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং ইহার নামে ইহা মামলা দায়ের করিতে পরিবে বা ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।
(৩) তথ্য কমিশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে এবং কমিশন, প্রয়ােজনে, বাংলাদেশের যে কোন স্থানে উহার শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে।
১২। তথ্য কমিশনের গঠন।—
(১) প্রধান তথ্য কমিশনার এবং অন্য ২ (দুই) জন তথ্য কমিশনার সমন্বয়ে তথ্য কমিশন গঠিত হইবে, যাহাদের মধ্যে অন্যূন ১ (এক) জন মহিলা হইবেন।
(২) প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনের প্রধান নির্বাহী হইবেন।
(৩) তথ্য কমিশনের কোন পদে শূন্যতা বা উহা গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে তথ্য কমিশনের কোন কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎসম্পর্কে কোন প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না।
১৩। তথ্য কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলী।—
(১) কোন ব্যক্তি নিম্নলিখিত কারণে কোন অভিযােগ দায়ের করিলে তথ্য কমিশন, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, উক্ত অভিযােগ গ্রহণ, উহার অনুসন্ধান এবং নিষ্পত্তি করিতে পরিবে, যথাঃ—
(ক) কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়ােগ না করা কিংবা তথ্যের জন্য অনুরােধপত্র গ্রহণ না করা;
(খ) কোন তথ্য চাহিদা প্রত্যাখ্যাত হইলে;
(গ) তথ্যের জন্য অনুরােধ করিয়া, এই আইনে উল্লিখিত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে কোন জবাব বা তথ্য প্রাপ্ত না হইলে;
(ঘ) কোন তথ্যের এমন অংকের মূল্য দাবী করা হইলে, বা প্রদানে বাধ্য করা হইলে, যাহা তাহার বিবেচনায় যৌক্তিক নয়;
ঙ) অনুরােধের প্রেক্ষিতে অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করা হইলে বা যে তথ্য প্রদান করা হইয়াছে উহা ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিকর বলিয়া মনে হইলে;
(চ) এই আইনের অধীন তথ্যের জন্য অনুরােধ জ্ঞাপন বা তথ্য প্রাপ্তি সম্পর্কিত অন্য যে কোন বিষয়।
(২) তথ্য কমিশন স্ব-প্রণােদিত হইয়া অথবা কোন অভিযােগের ভিত্তিতে এই আইনের অধীন উত্থাপিত অভিযােগ সম্পর্কে অনুসন্ধান করিতে পারিবে।
(৩) নিম্নলিখিত বিষয়ে Code of Civil procedure, ১৯০৮ (Act V of 1908) এর অধীন একটি দেওয়ানী আদালত যে ক্ষমতা প্রয়ােগ করিতে পারিবে তথ্য কমিশন বা, ক্ষেত্রমত, প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারও এই ধারার অধীন সেইরূপ ক্ষমতা প্রয়ােগ করিতে পারিবেন, যথাঃ—
(ক) কোন ব্যক্তিকে তথ্য কমিশনে হাজির করিবার জন্য সমন জারী করা এবং শপথপূর্বক মৌখিক বা লিখিত প্রমাণ, দলিল বা অন্য কোন কিছু হাজির করিতে বাধ্য করা;
(খ) তথ্য যাচাই ও পরিদর্শন করা;
(গ) হলফনামাসহ প্রমাণ গ্রহণ করা;
ঘ) কোন অফিসের কোন তথ্য আনয়ন করা;
ঙ) কোন সাক্ষী বা দলিল তলব করিয়া সমন জারী করা; এবং
চ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য যে কোন বিষয়।
(৪) অন্য কোন আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন কোন অভিযােগ অনুসন্ধানকালে তথ্য কমিশন বা, ক্ষেত্রমত, প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনার কোন কর্তৃপক্ষের নিকট রক্ষিত অভিযােগ সংশ্লিষ্ট যে কোন তথ্য সরেজমিনে পরীক্ষা করিতে পারিবেন।
(৫) তথ্য কমিশনের কার্যাবলী হইবে নিম্নরূপ, যথাঃ
(ক) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, প্রকাশ, প্রচার ও প্রাপ্তির বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান;
(খ) কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে তথ্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে অনুরােধের পদ্ধতি নির্ধারণ ও, ক্ষেত্রমত, তথ্যের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ;
(গ) নাগরিকদের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে নীতিমালা এবং নির্দেশনা প্রণয়ন ও প্রকাশ;
(ঘ) তথ্য অধিকার সংরক্ষণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনের অধীন স্বীকৃত ব্যবস্থাদি পর্যালােচনা করা এবং উহার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য অসুবিধাসমূহ চিহ্নিত করিয়া উহা দূরীকরণার্থে সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;
(ঙ) নাগরিকদের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে বাধাসমূহ চিহ্নিত করা এবং যথাযথ প্রতিকারের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;
(চ) তথ্য অধিকার বিষয়ক চুক্তিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক দলিলাদির উপর গবেষণা করা এবং উহা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;
(ছ) নাগরিকদের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে তথ্য অধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিলের সহিত বিদ্যমান আইনের সাদৃশ্যতা পরীক্ষা করা এবং বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হওয়ার ক্ষেত্রে উহা দূরীকরণার্থে সরকার বা, ক্ষেত্রমত, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়ােজনীয় সুপারিশ প্রদান;
(জ) তথ্য অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক দলিল অনুসমর্থন বা উহাতে স্বাক্ষর প্রদানে সরকারকে পরামর্শ প্রদান;
(ঝ) তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে গবেষণা করা এবং শিক্ষা ও পেশাগত প্রতিষ্ঠানকে উক্তরূপ গবেষণা পরিচালনায় সহায়তা প্রদান;
(ঞ) সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকদের মধ্যে তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রচার এবং প্রকাশনা ও অন্যান্য উপায়ে তথ্য অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ;
(ট) তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়ােজনীয় আইন ও প্রশাসনিক নির্দেশনা প্রণয়নের ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ ও সহযােগিতা প্রদান;
(ঠ) তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মরত সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজকে প্রয়ােজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান;
(ড) এবং অনুরূপ অন্যবিধ ব্যবস্থার মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রচার;
(ঢ) তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষকে কারিগরী ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান;
ণ) তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য একটি ওয়েব পাের্টাল স্থাপন; এবং
(ত) তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে অন্য কোন আইনে গৃহীত ব্যবস্থাদি পর্যালােচনা করা।
১৪। বাছাই কমিটি।—
(১) প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনার নিয়ােগের জন্য সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত ৫ (পাঁচ) জন সদস্য সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হইবে, যথাঃ—
(ক) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনােনীত আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি, যিনি উহার সভাপতিও হইবেন;
(খ) মন্ত্রিপরিষদ সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার;
(গ) সংসদ কার্যকর থাকাকালীন অবস্থায় স্পিকার কর্তৃক মনােনীত সরকারি দলের একজন এবং বিরােধী দলের একজন সংসদ সদস্য;
(ঘ) সম্পাদকের যােগ্যতাসম্পন্ন সাংবাদিকতা পেশায় নিয়ােজিত এমন অথবা গণমাধ্যমের সহিত সম্পর্কিত সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকগণের মধ্য হইতে সরকার কর্তৃক মনােনীত একজন প্রতিনিধি।
(২) তথ্য মন্ত্রণালয় উপ-ধারা (১) এর অধীন বাছাই কমিটি গঠনে এবং উক্ত বাছাই কমিটির কার্য-সম্পাদনে প্রয়ােজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবে।
(৩) অন্যূন ৩ (তিন) জন সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম গঠিত হইবে।
(৪) বাছাই কমিটি, প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনার নিয়ােগের নিমিত্ত রাষ্ট্রপতির নিকট, সভায় উপস্থিত সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে ২ (দুই) জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করিবে।
(৫) বাছাই কমিটিতে ভােটের সমতার ক্ষেত্রে সভাপতির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভােট প্রদানের অধিকার থাকিবে।
(৬) বাছাই কমিটি উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
(৭) শুধুমাত্র কোন সদস্যপদে শূন্যতা বা বাছাই কমিটি গঠনে ক্রটি থাকিবার কারণে, উহার কোন কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎসম্পর্কে কোন প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না।
১৫। প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের নিয়ােগ, মেয়াদ, পদত্যাগ, ইত্যাদি।—
(১) রাষ্ট্রপতি, বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে, প্রধান তথ্য কমিশনার এবং অন্যান্য তথ্য কমিশনারগণকে নিয়ােগ করিবেন।
(২) ৬৭ (সাতষট্টি) বৎসর অপেক্ষা অধিক বয়স্ক কোন ব্যক্তি প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনার পদে নিয়ােগ লাভের বা অধিষ্ঠিত থাকিবার যােগ্য হইবেন না।
(৩) প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণ নিয়ােগ লাভের তারিখ হইতে ৫ (পাঁচ) বৎসর কিংবা ৬৭ (সাতষট্টি) বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত, যেইটি আগে ঘটে, স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।
(৪) প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারগণ একই পদে পুনরায় নিয়ােগ লাভের যােগ্য হইবেন না, তবে কোন তথ্য কমিশনার প্রধান তথ্য কমিশনার পদে নিয়ােগ লাভের অযােগ্য হইবেন না।
(৫) আইন, বিচার, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্য, সমাজকর্ম, ব্যবস্থাপনা বা জনপ্রশাসনে ব্যাপক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অধিকারী ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারগণ, এই ধারার বিধানাবলী সাপেক্ষে, নিযুক্ত হইবেন।
(৬) প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারগণ রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযােগে যে কোনাে সময় স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।
(৭) প্রধান তথ্য কমিশনারের পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনাে কারণে প্রধান তথ্য কমিশনার তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, নবনিযুক্ত প্রধান তথ্য কমিশনার তাহার পদে যােগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান তথ্য কমিশনার পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতম তথ্য কমিশনার প্রধান তথ্য কমিশনার পদের দায়িত্ব পালন করিবেন।
১৬। প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের অপসারণ।—
(১) সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারক যেরূপ কারণ ও পদ্ধতিতে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ কারণ ও পদ্ধতি ব্যতীত প্রদান তথ্য কমিশনার বা কোন তথ্য কমিশনারকে অপসারণ করা যাইবে না।
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রপতি প্রধান তথ্য কমিশনার বা অন্য কোন তথ্য কমিশনারকে তাহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবেন, যদি তিনি
- (ক) কোন উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘােষিত হন; বা
- (খ) পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্বীয় দায়িত্ব বহির্ভূত অন্য কোন পদে নিয়ােজিত হন; বা
- (গ) কোন উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতস্থ ঘােষিত হন; বা
- (ঘ) নৈতিক স্খলনজনিত কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।
১৭। তথ্য কমিশনারগণের পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুবিধাদি। প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক, ভাতা, ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।
১৮। তথ্য কমিশনের সভা।—
(১) এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, তথ্য কমিশন উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
(২) প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনের সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে তথ্য কমিশনারগণের মধ্যে যিনি তথ্য কমিশনার হিসাবে জ্যেষ্ঠতম তিনি সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।
(৩) প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারগণের মধ্যে যে কোন ১ (এক) জনের উপস্থিতিতে তথ্য কমিশনের সভার কোরাম গঠিত হইবে।
(৪) তথ্য কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান তথ্য কমিশনার এবং অন্যান্য তথ্য কমিশনারগণের একটি করিয়া ভােট থাকিবে এবং ভােটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভােট প্রদানের অধিকার থাকিবে।
পঞ্চম অধ্যায়ঃ তথ্য কমিশনের আর্থিক বিষয়াদি (তথ্য অধিকার আইন ২০০৯)
১৯। তথ্য কমিশন তহবিল।—
(১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে তথ্য কমিশন তহবিল নামে একটি তহবিল গঠিত হইবে।
(২) তথ্য কমিশন তহবিল এর পরিচালনা ও প্রশাসন, এই ধারা এবং বিধির বিধান সাপেক্ষে, তথ্য কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকিবে।
(৩) তথ্য কমিশন তহবিল হইতে প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের এবং সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও চাকুরীর শর্তাবলী অনুসারে প্রদেয় অর্থ প্রদান করা হইবে এবং তথ্য কমিশনের প্রয়ােজনীয় অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হইবে।
(৪) তথ্য কমিশন তহবিলে নিম্নবর্ণিত অর্থ জমা হইবে, যথা –
- (ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বাৎসরিক অনুদান;
- (খ) সরকারের সম্মতিক্রমে কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান।
২০। বাজেট।— তথ্য কমিশন প্রতি বৎসর সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরবর্তী অর্থবৎসরের বার্ষিক বাজেট বিবরণী সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ফরমে অনুমােদনের জন্য সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং উহাতে উক্ত অর্থ-বৎসরে সরকারের নিকট হইতে তথ্য কমিশনের কি পরিমাণ অর্থের প্রয়ােজন হইবে উহার উল্লেখ থাকিবে।
২১। তথ্য কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা।—
(১) সরকার প্রতি অর্থ-বৎসরে তথ্য কমিশনের ব্যয়ের জন্য, উহার চাহিদা বিবেচনায়, উহার অনুকূলে নির্দিষ্টকৃত অর্থ বরাদ্দ করিবে এবং অনুমােদিত ও নির্ধারিত খাতে উক্ত বরাদ্দকৃত অর্থ হইতে ব্যয় করিবার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমােদন গ্রহণ করা তথ্য কমিশনের জন্য আবশ্যক হইবে না।
(২) এই ধারার বিধান দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৮ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মহাহিসাব নিরীক্ষকের অধিকার ক্ষুন্ন করা হইয়াছে বলিয়া ব্যাখ্যা করা যাইবে না।
২২। হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা।—
(১) তথ্য কমিশন যথাযথভাবে উহার হিসাব রক্ষণ করিবে এবং হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে।
(২) বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহাহিসাব নিরীক্ষক নামে অভিহিত, প্রতি বৎসর তথ্য কমিশনের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা রিপাের্টের একটি করিয়া অনুলিপি সরকার ও তথ্য কমিশনের নিকট পেশ করিবেন।
(৩) উপ-ধারা (২) মােতাবেক হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহাহিসাব নিরীক্ষক কিংবা তাহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি তথ্য কমিশনের সকল রেকর্ড, দলিল দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভাণ্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারগণ বা যে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।
ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ তথ্য কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী (তথ্য অধিকার আইন ২০০৯)
২৩। তথ্য কমিশনের সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী।—(১) তথ্য কমিশনের একজন সচিব থাকিবেন।
(২) এই আইনের অধীন তথ্য কমিশন উহার কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে সরকারের পূর্বানুমােদনক্রমে সাংগঠনিক কাঠামাে নির্ধারণপূর্বক প্রয়ােজনীয় সংখ্যক অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ােগ করিতে পারিবে।
(৩) সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও চাকুরীর শর্তাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।
(৪) সরকার, তথ্য কমিশনের অনুরােধক্রমে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনাে কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কমিশনে প্রেষণে নিয়ােগ করিতে পারিবে।
সপ্তম অধ্যায়ঃ আপীল, অভিযােগ, ইত্যাদি (তথ্য অধিকার আইন ২০০৯)
২৪। আপীল নিষ্পত্তি, ইত্যাদি।—
(১) কোন ব্যক্তি ধারা ৯ এর উপ-ধারা (১), (২) বা (৪) এ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য লাভে ব্যর্থ হইলে কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোন সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হইলে উক্ত সময়সীমা অতিক্রান্ত হইবার, বা ক্ষেত্রমত, সিদ্ধান্ত লাভ করিবার পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে আপীল কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল করিতে পারিবেন।
(২) আপীল কর্তৃপক্ষ যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আপীলকারী যুক্তিসংগত কারণে উপ-ধারা (১) এ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আপীল দায়ের করিতে পারেন নাই, তাহা হইলে তিনি উক্ত সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পরও আপীল আবেদন গ্রহণ করিতে পারিবেন।
(৩) আপীল কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (১) বা (২) এর অধীন আপীল আবেদন প্রাপ্তির পরবর্তী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে-
- (ক) আপীল আবেদনকারীকে অনুরােধকৃত তথ্য সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করিবেন; অথবা
- (খ) তদৃবিবেচনায় গ্রহণযােগ্য না হইলে আপীল আবেদনটি খারিজ করিয়া দিবেন।
(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশিত হইলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্তরূপ নির্দেশ প্রাপ্তির তারিখ হইতে ধারা ৯ এর, ক্ষেত্রমত, উপ-ধারা (১), (২) বা (৪) এ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আপীল আবেদনকারীকে অনুরােধকৃত তথ্য সরবরাহ করিবেন।
২৫। অভিযােগ দায়ের, নিস্পত্তি, ইত্যাদি-
(১) কোন ব্যক্তি নিম্নলিখিত কারণে তথ্য কমিশনে অভিযােগ দায়ের করিতে পারিবে, যথা:
(ক) ধারা ১৩ এর উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কারণে তথ্য প্রাপ্ত না হইলে;
(খ) ধারা ২৪ এর অধীন প্রদত্ত আপীলের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হইলে;
(গ) ধারা ২৪ এ উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য প্রাপ্তি বা, ক্ষেত্রমত, তথ্য প্রদান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রাপ্ত না হইলে।
(২) উপ-ধারা (১) এর দফা (ক) তে উল্লিখিত বিষয়ে যে কোন সময় এবং দফা (খ) ও (গ) তে উল্লিখিত বিষয়ে উক্তরূপ সিদ্ধান্ত প্রদানের তারিখ বা, ক্ষেত্রমত, সময়সীমা অতিক্রান্ত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনে অভিযােগ দায়ের করিতে পারিবেন।
(৩) তথ্য কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, অভিযােগকারী যুক্তিসংগত কারণে উপ-ধারা (২) এ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অভিযােগ দায়ের করিতে পারেন নাই, তাহা হইলে তথ্য কমিশন উক্ত সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পরও অভিযােগ গ্রহণ করিতে পারিবেন।
(৪) কোন অভিযােগের ভিত্তিতে কিংবা অন্য কোনভাবে তথ্য কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোন কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই আইনের বিধানাবলী অনুসরণে করণীয় কোন কার্য করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন বা করণীয় নয় এমন কার্য করিয়াছেন তাহা হইলে তথ্য কমিশন এই ধারার অধীন উক্ত কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করিতে পারিবে।
(৫) উপ-ধারা (১) এর অধীন অভিযােগ প্রাপ্তির পর কিংবা উপ-ধারা (৪) এর অধীন কোন কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়ােজন হইলে প্রধান তথ্য কমিশনার উক্ত অভিযােগটি স্বয়ং অনুসন্ধান করিবেন অথবা অনুসন্ধানের জন্য অন্য কোন তথ্য কমিশনারকে দায়িত্ব প্রদান করিবেন।
(৬) উপ-ধারা (৫) এ উল্লিখিত দায়িত্ব গ্রহণ বা প্রাপ্তির ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অভিযােগের অনুসন্ধান সম্পন্ন করিয়া প্রধান তথ্য কমিশনার বা, ক্ষেত্রমত, তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনের জন্য একটি সিদ্ধান্ত কার্যপত্র প্রস্তুত করিবেন।
(৭) উপ-ধারা (৬) এ উল্লিখিত সিদ্ধান্ত কার্যপত্র তথ্য কমিশনের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করিতে হইবে এবং তথ্য কমিশন উহার সভায় আলােচনাক্রমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।
(৮) এই ধারায় উল্লিখিত কোন অভিযােগের অনুসন্ধানকালে যে কর্তৃপক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোেগ দায়ের করা হয় সেই কর্তৃপক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে, তাহার সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সুযােগ প্রদান করিতে হইবে।
(৯) কোন অভিযােগের বিষয়বস্তুর সহিত তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকিলে তথ্য কমিশন উক্ত তৃতীয় পক্ষকেও বক্তব্য পেশ করিবার সুযােগ প্রদান করিবে।
(১০) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রাপ্ত অভিযােগ তথ্য কমিশন সাধারণভাবে ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ দিনের মধ্যে নিস্পত্তি করিবে, তবে, ক্ষেত্র বিশেষে, স্বাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ বা তদন্ত সম্পাদন ইত্যাদি কারণে বর্ধিত সময়ের প্রয়ােজন হইলে উক্ত বর্ধিত সময়ের মধ্যে অভিযােগ নিষ্পন্ন করা যাইবে ?
তবে শর্ত থাকে যে, অভিযােগ নিষ্পত্তির সময়সীমা, বর্ধিত সময়সহ, কোনক্রমেই সর্বমােট ৭৫ (পঁচাত্তর) দিনের অধিক হইবে না।
(১১) এই ধারার অধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তথ্য কমিশনের নিম্নরূপ ক্ষমতা থাকিবে, যথাঃ—
(ক) কোন কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিম্নরূপ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা যাহা এই আইনের বিধান মােতাবেক গ্রহণ করা প্রয়ােজন, যথাঃ—
- (অ) অনুরােধকৃত তথ্য সুনির্দিষ্ট পন্থায় প্রদান;
- (আ) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োেগ;
- (ই) বিশেষ কোন তথ্য বা বিশেষ ধরনের তথ্যাবলী প্রকাশ;
- (ঈ) তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও প্রকাশের ক্ষেত্রে উক্ত কর্তৃপক্ষের পালনীয় পদ্ধতিতে প্রয়ােজনীয় পরিবর্তন আনয়ন;
- (উ) কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের তথ্য অধিকার বিষয়ক উন্নত প্রশিক্ষণ;
- (উ) কোন ক্ষতি বা অন্য কোন প্রকার দুর্ভোগের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান;
(খ) এই আইনে বর্ণিত কোন জরিমানা আরােপ করা;
(গ) কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা;
(ঘ) অভিযােগ খারিজ করা;
(ঙ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নূতনভাবে তথ্যের শ্রেণীবদ্ধকরণ;
(চ) তথ্যের প্রকৃতি, শ্রেণীবিন্যাসকরণ, সংরক্ষণ, প্রকাশ ও সরবরাহ সংক্রান্ত ইত্যাদি বিষয়ে এই আইনের আলােকে ব্যাখ্যা প্রদান।
(১২) এই ধারার অধীন প্রদত্ত তথ্য কমিশনের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক হইবে।
(১৩) তথ্য কমিশন ইহার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করিবে।
(১৪) তথ্য কমিশন প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে অভিযােগ নিষ্পত্তির অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
২৬। প্রতিনিধিত্বঃ কোন অভিযােগের পক্ষসমূহ তথ্য কমিশনের সামনে ব্যক্তিগতভাবে বা আইনজীবীর মাধ্যমে তাহাদের বক্তব্য উপস্থাপন করিতে পারিবেন।
২৭। জরিমানা, ইত্যাদিঃ—(১) কোন অভিযােগ নিষ্পত্তির সূত্রে কিংবা অন্য কোনভাবে তথ্য কমিশনের যদি এই মর্মে বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
ক) কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরােধ বা আপীল গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিয়াছেন;
খ) এই আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনুরােধকারীকে তথ্য প্রদান করিতে কিংবা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন;
(গ) অসদুদ্দেশ্যে তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরােধ বা আপীল প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন;
(ঘ) যে তথ্য প্রাপ্তির অনুরােধ করা হইয়াছিল তাহা প্রদান না করিয়া ভুল, অসম্পূর্ণ, বিভ্রান্তিকর বা বিকৃত তথ্য প্রদান করিয়াছেন;
(ঙ) কোন তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়াছেন— তাহা হইলে তথ্য কমিশন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উক্তরূপ কার্যের তারিখ হইতে তথ্য সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতি দিনের জন্য ৫০(পঞ্চাশ) টাকা হারে জরিমানা আরােপ করিতে পারিবে, এবং এইরূপ জরিমানা কোনক্রমেই ৫০০০(পাঁচ হাজার) টাকার অধিক হইবে না।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন জরিমানা আরােপের পূর্বে তথ্য কমিশন, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাহার বক্তব্য পেশ করিবার সুযােগ প্রদান করিবে।
(৩) তথ্য কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, নাগরিকের তথ্য প্রাপ্তিতে উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কার্য করিয়া কোন কর্মকর্তা বিঘ্ন সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা হইলে তথ্য কমিশন, প্রযােজ্য ক্ষেত্রে, উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত জরিমানা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার এহেন কার্যকে অসদাচরণ গণ্য করিয়া তাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে সুপারিশ করিতে পারিবে এবং এই বিষয়ে গৃহীত সর্বশেষ ব্যবস্থা তথ্য কমিশনকে অবহিত করিবার জন্য উক্ত কর্তৃপক্ষকে অনুরােধ করিতে পারিবে।
(৪) এই ধারার অধীন পরিশােধযােগ্য কোন জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ পরিশােধ না হইলে তাহা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট হইতে Public Demands Recovery Act, 1913 (Act IX of 1913) এর বিধান অনুযায়ী বকেয়া ভূমি রাজস্ব যে পদ্ধতিতে আদায় করা হয় সেই পদ্ধতিতে আদায়যােগ্য হইবে।
২৮। Limitation Act, 1908 এর প্রয়োগ।— এই আইনের অধীন আপীল বা অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে Limitation Act, 1908 (Act IX of 1908) এর বিধানাবলী, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, যতদূর সম্ভব, প্রযােজ্য হইবে।
২৯। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা।— এই আইনের অধীন কৃত বা কৃত বলিয়া গণ্য কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে, এই আইনে উল্লিখিত আপীল কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল বা, ক্ষেত্রমত, তথ্য কমিশনের নিকট অভিযােগ দায়ের ব্যতীত, কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
অষ্টম অধ্যায়ঃ বিবিধ (তথ্য অধিকার আইন ২০০৯)
৩০। তথ্য কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন।—
(১) প্রতি বৎসরের ৩১ মার্চ এর মধ্যে তথ্য কমিশন উহার পূর্ববর্তী বৎসরের কার্যাবলী সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট বৎসরের নিম্নলিখিত তথ্য সন্নিবেশিত থাকিবে, যথাঃ—
(ক) কর্তৃপক্ষওয়ারী তথ্য সরবরাহের জন্য প্রাপ্ত অনুরােধের সংখ্যা;
(খ) অনুরােধকারীকে অনুরােধকৃত তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সংখ্যা এবং এই আইনের যে সকল বিধানের আওতায় উক্ত সিদ্ধান্তগুলি গৃহীত হইয়াছে উহার বিবরণ;
(গ) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপীলের সংখ্যা এবং উক্ত আপীলের ফলাফল;
(ঘ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উহার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিবরণ;
(ঙ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এই আইনের অধীন সংগৃহীত উপযুক্ত মূল্যের পরিমাণ;
(চ) এই আইনের বিধানাবলী বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের বিবরণ;
(ছ) নাগরিকের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সহিত সম্পৃক্ত বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রাপ্ত সংস্কার প্রস্তাব;
(জ) তথ্য কমিশন কর্তৃক প্রাপ্ত অভিযােগের সংখ্যা;
(ঝ) তথ্য কমিশন কর্তৃক প্রাপ্ত অভিযােগের বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থার বিবরণ;
(ঞ) তথ্য কমিশন কর্তৃক আরােপিত ও দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা ও উহার বিবরণ;
(ট) তথ্য কমিশন কর্তৃক আরােপিত ও আদায়কৃত জরিমানার মােট পরিমাণ;
(ঠ) তথ্য কমিশন কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশনা ও প্রবিধানমালা;
(ড) তথ্য কমিশনের আয়-ব্যয়ের হিসাব;
(ঢ) তথ্য কমিশনের বিবেচনায় প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়ােজন এইরূপ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়;
(ণ) এই আইনের বিধানাবলী প্রতিপালনে কোন কর্তৃপক্ষের অনীহা পরিলক্ষিত হইলে উক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর রাষ্ট্রপতি উহা জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করিবেন।
(৪) উপ-ধারা (১) এর অধীন রাষ্ট্রপতির নিকট পেশকৃত প্রতিবেদন তথ্য কমিশন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও প্রচার করিবে।
(৫) এই ধারার অধীন প্রতিবেদন প্রণয়নের প্রয়ােজনে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ তথ্য কমিশনকে প্রয়ােজনীয় তথ্যাবলী সরবরাহসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সহায়তা প্রদান করিবে।
৩১। সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ।—
এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি বা প্রবিধানের অধীন সরল বিশ্বাসে তথ্য প্রকাশ করা হইয়াছে বা করিবার উদ্দেশ্য ছিল বলিয়া বিবেচিত, কোন কার্যের জন্য কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে তিনি তথ্য কমিশন, প্রধান তথ্য কমিশনার, তথ্য কমিশনারগণ বা তথ্য কমিশনের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী, বা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অন্য কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলা বা অন্য কোন আইনগত কার্যধারা রুজু করা যাইবে না।
৩২। কতিপয় সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযােজ্য নহে।—
(১) এই আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, তফসিলে উল্লিখিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গােয়েন্দা কার্যে নিয়ােজিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযােজ্য হইবে না।
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উক্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কোন তথ্য দুর্নীতি বা মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার সহিত জড়িত থাকিলে উক্ত ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযােজ্য হইবে না।
(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত তথ্য প্রাপ্তির জন্য কোন অনুরােধ প্রাপ্ত হইলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, তথ্য কমিশনের অনুমােদন গ্রহণ করিয়া, অনুরােধ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে অনুরােধকারীকে উক্ত তথ্য প্রদান করিবে।
(৪) তফসিলে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহের সংখ্যার হ্রাস বা বৃদ্ধির প্রয়ােজনে সরকার তথ্য কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে, সময় সময়, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত তফসিল সংশােধন করিতে পারিবে।
৩৩। বিধি প্রণয়ন ক্ষমতা —
এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, তথ্য কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে এবং সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
৩৪। প্রবিধান প্রণয়ন ক্ষমতা– এই আইনের উদ্দেশ্যে পূরণকল্পে তথ্য কমিশন, সরকারের পূর্বানুমােদনক্রমে এবং সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
৩৫। অস্পষ্টতা দূরীকরণ।— এই আইনের কোন বিধান কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোন অস্পষ্টতা দেখা দিলে সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, উক্তরূপ অস্পষ্টতা অপসারণ করিতে পারিবে।
৩৬। মূল পাঠ এবং ইংরেজি পাঠ।— এই আইনের মূল পাঠ বাংলাতে হইবে এবং ইংরেজিতে অনুদিত উহার একটি নির্ভরযােগ্য পাঠ থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে, বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরােধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।
৩৭। রহিতকরণ ও হেফাজত।—
(১) এতদ্বারা তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ, ২০০৮ (২০০৮ সনের ৫০ নং অধ্যাদেশ) রহিত করা হইল।
(২) উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও রহিতকৃত অধ্যাদেশ এর অধীন কৃত কোন কার্য বা গৃহীত কোন ব্যবস্থা এই আইনের অধীন কৃত বা গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।
তফসিল (তথ্য অধিকার আইন ২০০৯)
(ধারা ৩২ দ্রষ্টব্য)
সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গােয়েন্দা কার্যে নিয়ােজিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানসমূহ
সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানসমূহঃ
(১) জাতীয় নিরাপত্তা গােয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)।
(২) ডাইরেক্টরেট জেনারেল ফোর্সেস ইনটেলিজেন্স (ডিজিএফআই)।
(৩) প্রতিরক্ষা গােয়েন্দা ইউনিটসমূহ।
(৪) ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি), বাংলাদেশ পুলিশ।
(৫) স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)।
(৬) জাতীয় রাজস্ব বাের্ডের গােয়েন্দা সেল।
(৭) স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ।
(৮) রেপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (রেব) এর গােয়েন্দা সেল।
আশফাক হামিদ (সচিব)
মােঃ মাছুম খান (উপ-সচিব), উপ-নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়, ঢাকা কর্তৃক মুদ্রিত। মােঃ আক্তার হােসেন (উপ-সচিব), উপ-নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিস, তেজগাঁও, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত। www.bgpress.gov.bd