সপ্তাহান্তের ঘুম: আপনার হৃদযন্ত্রের জন্য এক নতুন পথের সন্ধান!

কর্তৃক সরকারি আদেশ
0 মন্তব্য 151 views

ব্যস্ত জীবনের দৌড়ে প্রতিদিন কি পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে? অফিসের কাজ, পারিবারিক দায়িত্ব, আর দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরকে বিশ্রাম দেওয়ার আগেই আবারও নতুন দিনের প্রস্তুতি নিতে হয়। এই অবস্থায়, সপ্তাহের মাঝখানে ঘুমের ঘাটতি মেটাতে অনেকেই সপ্তাহান্তে ঘুমানোর দিকে ঝুঁকে পড়েন। 

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই অতিরিক্ত ঘুম কি সত্যিই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী? বিশেষ করে, এটি কি আমাদের হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে পারে? নতুন গবেষণা বলছে, হ্যাঁ—সপ্তাহান্তে কিছুটা অতিরিক্ত ঘুম আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি ১৯% পর্যন্ত কমাতে পারে!

সকালের আলোয় একটি শান্তিপূর্ণ শোবার ঘর, যেখানে সাদা বিছানায় একজন ব্যক্তি ঘুমাচ্ছেন। ঘরের পেছনে একটি হৃদযন্ত্রের প্রতীক দেখা যাচ্ছে, যা ঘুম ও হৃদস্বাস্থ্যের সম্পর্ককে তুলে ধরছে।

সাদা বিছানায় শান্তিপূর্ণ ঘুম

ঘুম আর হৃদযন্ত্রের সম্পর্ক: বিজ্ঞান কী বলে?

সম্প্রতি এক গবেষণায় ৯০ হাজার মানুষের ঘুমের ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই গবেষণা অনুযায়ী, যারা সপ্তাহের মাঝে কম ঘুমায় এবং সপ্তাহান্তে সেই ঘাটতি পূরণ করে, তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে দেখা গেছে।

গড়ে প্রায় ১৪ বছরের পর্যবেক্ষণের পর দেখা গেছে, যারা সপ্তাহান্তে পর্যাপ্ত ঘুম পূরণ করতে পেরেছে, তাদের হার্টের সমস্যা যেমন হৃদরোগ, হার্ট ফেলিওর, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি অনেক কম ছিল।

এখন প্রশ্ন , কেন ঘুম আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ?

 

হৃদযন্ত্রের জন্য ঘুমের গুরুত্ব

ঘুম শুধু আমাদের শরীরকে বিশ্রাম দেয় না, এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমরা যথেষ্ট ঘুমাই না, তখন আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও, এটি স্থূলতা, মানসিক চাপ এবং আরও অনেক সমস্যার জন্ম দিতে পারে—যা সরাসরি হৃদযন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন সাত ঘণ্টার কম ঘুমায়, তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে সপ্তাহান্তে পর্যাপ্ত ঘুম দিয়ে এই ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ গ্রিন টি: গবেষকদের মতে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি

 

সপ্তাহান্তে ঘুম: কি করতে পারেন?

আপনার কি প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমের সময় নেই? আপনি একা নন। আমাদের জীবনের ব্যস্ততা প্রায়ই আমাদের নিয়মিত ঘুমের সময়কে কমিয়ে দেয়। তবে, সপ্তাহান্তে কিছুটা সময় বের করে সেই ঘুমের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করুন। এতে দীর্ঘমেয়াদে আপনার হৃদযন্ত্র আরও ভালো থাকবে।

যদিও সপ্তাহের প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমানো সবচেয়ে ভালো সমাধান, কিন্তু যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে সপ্তাহান্তে ঘুম পূরণ করাও একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। 

 

বাস্তব জীবনের প্রভাব

ধরুন, আপনি প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা ঘুমান—যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। কিন্তু, যদি আপনি সপ্তাহান্তে আরও ২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করেন, তাহলে এর ফলে আপনার হৃদযন্ত্রের উপর যে চাপ পড়ছিল, তা অনেকটাই কমে যাবে। 

তবে, ঘুমের মানও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, ঘুম যেন শান্তিপূর্ণ এবং গভীর হয়। বারবার জেগে উঠলে সেই ঘুম পূর্ণ বিশ্রাম দিতে পারবে না। তাই, শুধু সময় নয়, ঘুমের গুণমানকেও গুরুত্ব দিন।

জানুনঃ বিভিন্ন বয়সে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা: কেন এবং কতটুকু?

শেষ কথা: আপনার হৃদযন্ত্রের যত্ন নিন

আপনার হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকলে আপনার পুরো শরীর থাকবে সুস্থ। আর সেই সুস্থতার প্রথম ধাপ হলো পর্যাপ্ত ঘুম। সপ্তাহের প্রতিদিনই চেষ্টা করুন নিয়মিত ঘুমানোর। তবে, যদি সেটি সম্ভব না হয়, অন্তত সপ্তাহান্তে কিছুটা বিশ্রাম নিন। 

তাই এই সপ্তাহান্তে, নিজের জন্য একটু সময় বের করুন, আরাম করুন, আর হৃদযন্ত্রকে দিন সঠিক বিশ্রাম। আপনার হৃদয় এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।

 

গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি প্রশ্নোত্তর 

১: সপ্তাহান্তে অতিরিক্ত ঘুম কি সপ্তাহের ঘুমের ঘাটতি পূরণ করতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, গবেষণায় দেখা গেছে যে সপ্তাহান্তে অতিরিক্ত ঘুম সপ্তাহের ঘুমের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে যারা সপ্তাহের মাঝে কম ঘুমায়, তারা সপ্তাহান্তে ঘুমের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

২: প্রতিদিন কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত?

উত্তর: সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। এটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়। 

৩: সপ্তাহের দিনগুলোতে যদি কম ঘুমাই, তাহলে কি শুধুমাত্র সপ্তাহান্তে ঘুমিয়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব?

উত্তর: যদিও সপ্তাহান্তে ঘুমানোর মাধ্যমে কিছুটা ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব, তবুও প্রতিদিন নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম সবচেয়ে ভালো। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে দীর্ঘমেয়াদে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

৪: ঘুমের অভাব কী ধরনের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়?

উত্তর: ঘুমের অভাবে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, এবং এমনকি স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। নিয়মিত ঘুমানোর মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলো কমানো সম্ভব।

৫: ভালো মানের ঘুম কেমন হওয়া উচিত?

উত্তর: ভালো মানের ঘুম বলতে বোঝায় গভীর এবং নিরবচ্ছিন্ন ঘুম। আপনার ঘুম যদি বারবার ভেঙে যায় বা অস্বস্তিকর হয়, তবে তা আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে পারবে না।

 

তথ্য সূত্রঃ CNN https://edition.cnn.com/2024/08/30/health/weekend-sleep-lower-heart-disease-risk-wellness/index.html

রিলেটেড আরও পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.